যেহেতু এ সীমাবদ্ধতাগুলো দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়, তাই আমাদের প্রয়োজন নতুন প্রযুক্তির। এক্ষেত্রে আমরা খুবই দুর্বল সিগন্যাল এর কথা আলোচনা করব, যা মোটামুটি ১২৬০০ মাইল অতিক্রম করতে সক্ষম। কংক্রিট ও অন্যান্য শক্ত বাধা পার হওয়া, যেকোন শক্তিশালী/শর্ট-রেঞ্জের সেলুলার সিগন্যালের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ব্যপার; সেজন্য ৫০ ওয়াটের সিগন্যাল দ্বারা ১২০০০ মাইল অতিক্রম আশা করা করা যায় না। পৃথিবীতে কোন GPS সিগন্যালকে সনাক্ত করাকে তুলনা করা যায় ১২০০০ মাইল দূর হতে ২৫ ওয়াটের বালবের আলো সনাক্ত করার সাথে।
এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন পরিবর্তনশীল উচ্চতা পরিমাপের প্রশ্ন আসে। GPS ও GLONASS হয়তো উচ্চতা পরিমাপ করতে পারে, কিন্তু এর মান ১০-২৫% পর্যন্ত হের-ফের হতে পারে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাবহারের উপযোগী নয়। এসকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্পেস-ভিত্তিক স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম আমাদের জীবনকে নানাভাবে বদলে দিয়েছে, সেটা হারানো মোবাইল ট্র্যাকিং-ই হোক আর বন্ধুর অবস্থান নির্ণয়ই হোক।
কেমন হত যদি আমরা ঘরের মধ্যের অবস্থানও নির্ণয় করতে পারতাম? বিশ্বাস করুন আর নাইবা করুন, আমরা Indoor Positioning System (IPS) প্রযুক্তির খুব কাছাকাছি পৌছে গেছি!
গত বছর গুগল ম্যাপ্স শুরু করে শপিংমল, এয়ারপোর্ট এবং বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকার জন্য floor plans এর; অপরদিকে নোকিয়াও IPS প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে যেটা ত্রিমাত্রিক, গুগলের মত দ্বিমাত্রিক নয়। গুগলের ওয়াই-ফাই ট্র্যাকিং সিস্টেম এবং নোকিয়ার ব্লুটুথ ব্যবহৃত প্রযুক্তি ঘরের অভ্যন্তরে কাজ করলেও এগুলো নির্ভুল বা নির্ভরযোগ্য নয়। সম্প্রতি Broadcom বাজারে একটি নতুন চিপ(BCM4752) ছেড়েছে, যা IPS প্রযুক্তি সমর্থন করে এবং খুব শীঘ্রই স্মার্টফোনে যুক্ত হবে।
এই Broadcam এর তৈরী চিপ-টি ওয়াইফাই, ব্লুটুথ এমনকি NFC(Near Field Communication) এর মাধ্যমে IPS প্রযুক্তি সাপোর্ট করে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, এই চিপ মোবাইল ফোনের অন্যান্য সেন্সরের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে, যেমনঃ gyroscope, magnetometer, accelerometer এবং altimeter. এটি খুব সহজেই তোমার প্রবেশ বিন্দু নির্ণয় করবে GPS দ্বারা, তোমার পদক্ষেপ গণনা করবে accelerometer দ্বারা, দিক নির্ণয় করবে gyroscope দ্বারা এবং উচ্চতা নির্ণয় করবে altimeter দ্বারা। এভাবেই সে কোন কিছুর নিখুঁত অবস্থান নির্ণয়ে সক্ষম হবে।
আগামী এক-দুই বছরের মধ্যেই IPS প্রযুক্তি হয়ত পর্যটক সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে পৌছে যাবে। যেদিন স্মার্টফোন থাকবে সবার হাতে হাতে, সেইদিন হয়ত এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্ব জুড়ে; হয়ত তা খুব বেশী দূরে নয়!
0 comments:
Post a Comment